পূজোর শেষ প্রস্তুতিতে হয়ে যাক ত্বক ও চুলের যত্ন
আকাশের ভেসে থাকা সাদা সাদা গুচ্ছ মেঘ আর জমিনের কাশফুল জানান দিয়েছে শরতের কথা। শরতের এ আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বছর ঘুরে হাজির হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ প্রধান উৎসবকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন সচেতনরা ব্যস্ত পছন্দের পোশাক খুঁজতে। কিন্তু পোশাক পরলেই তো হবে না, পূজার পুরো সপ্তাহ জুড়ে থাকতে হবে ফিট। তাই ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়ে পূজায় সবার মাঝে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপনের জন্য পূজা শুরুর আগেই প্রস্তুত হয়ে যাক আপনার ত্বক এবং চুল। উৎসবের ঠিক দুইদিন আগে ত্বকের সৌন্দর্য্যে ফেশিয়ালটি করে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে ক্লিনজিং ফেশিয়াল ভালো হবে। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে এবং ব্রণ কম উঠবে। পার্লারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতেই করতে পারেন। এতে ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
![]() |
পূজোর শেষ প্রস্তুতিতে হয়ে যাক ত্বক ও চুলের যত্ন। ছবিঃ সংগৃহীত |
ত্বকের যত্নঃ
গরমে ত্বকে ঘাম-তেল নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ওপর ধুলো-ময়লা, নোংরা জমে ত্বক নির্জীব ও অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। এ সময় ত্বক ভালো রাখার জন্য ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং এই তিনটি বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলতে হবে। যেহেতু এটা একদিনের উৎসব না তাই আগেই আপনি করে নিতে পারেন ফেসিয়াল স্পা। পার্লারে যে যেতে হবে তা কিন্তু নয়। ঘরেই করে নিন স্পা বা ফেসিয়াল। তার জন্য প্রথমে দূর করে ফেলুন ত্বকের সব ব্ল্যাক হেডস। প্রথমে ত্বক পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে হালকা গরম পানির ভাপ মুখে নিন। এতে রোমকূপ গুলো খুলে যাবে। এরপর বেকিং সোডা, চালের গুড়া কিংবা আধা বাটা মসুর ডাল দিয়ে ব্ল্যাক হেডস যুক্ত স্থান গুলোতে আঙ্গুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করুন। খুব জোরে চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।এছাড়া সময় কম থাকলে টুথপেস্টের সাথে একটু লবন ও দুই ফোটা পানি মিশিয়ে পেস্ট করে সেটা ব্ল্যাক হেডস বা হোয়াইট হেডস যুক্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন ৫-১০ মিনিট।এরপরে আঙ্গুল দিয়ে ঘষে হাল্কা করে ধুয়ে ফেলুন। এরপরে আপনার ত্বকের ধরন বুঝে যেকোন একটি ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি বেশ উপকারী। গোলাপ জলের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও এক চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য এটি বেশ ভালো একটি মাস্ক। পরিষ্কার মুখে মাস্ক লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোয়ার পর হালকা কোনো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে ত্বক ব্লিচ করতে চাইলে টমেটোর রস এক চা চামচ ও লেবুর রস এক চা চামচ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রেও ঘরোয়া বিভিন্ন উপাদান দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। দুধের সরের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ ও কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে উপরের দিকে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করুন পাঁচ মিনিট। এরপর পানি ঝাপটা দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে এই মিশ্রণ প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। টানা সাত দিন ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কভাব অনেকটাই কমে আসবে।
হাত,পা ও ঘাড়ের যত্নঃ
মুখের যত্ন তো থাকবেই, তবে সেই সাথে নিন হাত পায়ের যত্ন। এগুলো আপনার ব্যক্তিত্ব এবং চেহারার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত ম্যানিকিওর-পেডিকিওরের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন রাখুন হাত-পা। আর ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে কাঁচা দুধ ও মধু মেখে ৫ মিনিট পর গোসল করে ফেলুন। এতে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। ফলে ত্বক উজ্জল দেখাবে।হাত, পা এই প্রাকৃতিক প্রতিকার হাত, পা, ঘাড় ফর্সা, নরম এবং সুস্থ করবে। তাই ত্বক ফর্সা করার পাশাপাশি হাত, পা আর ঘাড়ের যত্নের জন্য ব্যবহার করতে পারেন প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার।
১ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে হাতের বিভিন্ন অংশে মালিশ করে নিন। এটা স্ক্রাবের কাজ করবে। যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁরা নারকেল তেলের পরিবর্তে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব করতে পারেন। স্ক্রাবের পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এতে ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর হয়ে যায়। প্যাকটি একিভাবে ঘাড়ও পায়ে ব্যবহার করুন।
চুলের যত্নঃ
ঝলমলে চুলের আকাঙ্ক্ষা সবারই। আর উৎসবে সবাই চুলগুলোকে একটু সুন্দর রাখতে চায়। গরমে রোদে বেশিক্ষণ থাকার জন্য চুলে সানবার্নের সমস্যা দেখা দেয়। বর্ষা আর গরম মিলিয়ে ঘাম, ধুলাবালিতে চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য ও কোমলতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিন গোসল এবং প্রায়ই শ্যাম্পু ব্যবহার করার পাশাপাশি চুলকে সুন্দর রাখতে দরকার একটু পরিচর্যার। আগেই আপনার চুলের ধরন বুঝে চেহারার সাথে সুন্দর মানিয়ে যায় এমন একটি হেয়ার কাট দিয়ে নিন। তারপরে বাসাতেই করে নিন হেয়ার স্পা। এছাড়া ও পছন্দমতো চুলে কয়েক রকমের তেল দিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে একটি প্যাঁক ব্যাবহার করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার লাগিয়ে নিতে পারেন। যেমনঃদই ও ডিমের হেয়ার প্যাকঃ
১ টি ডিম ফেটিয়ে ৩-৪ টেবিল চামচ দই ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। হেয়ার প্যাকটি ব্রাশের সাহায্যে চুলে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি খুশকি ও চুল পড়া রোধ করবে। তবে পূর্বে অবশ্যই কোন তেল কুসুম গরম করে ভালো করে মেসেজ করে পুরো মাথায় লাগিয়ে নিবেন।
মন্তব্যসমূহ